বাল্যস্মৃতি মনে পড়লে এখনও যন্ত্রণায় বেঁকে যায় মুখ। “বাপের এক মেয়ে ছিলাম। বাপ ছিল স্বার্থপর, মাকে ছেড়ে আবার বিয়ে করেছিল। যদ্দিন ছিল, মাকে দিনরাত নির্যাতন করত। ওসব কথা মনে রাখতে চাই না।” নিজের সংসারজীবনও সুখের হয়নি।
একমাত্র মেয়ে থেকেও নেই। তীক্ষ্ণ স্বরে ফুঁসে উঠলেন, “মেয়েটা পালিয়েছে। ঈশ্বর যদি চান, ফিরে আসবে। এত লোক তো দূর থেকে দেখা করতে আসে! সবাইকে চিনে নিয়েছি। এখন কেউ মিষ্টি করে কথা বললে গা জ্বালা করে। ভাল সময় ছিল যখন, আমার কাছে গাণ্ডেপিণ্ডে খেয়েছে। এখন অভাবে পড়েছি, পেটে দুটো ভাত দিতে পারে না।” এহেন কপর্দকশূন্য চালচুলোহীন রাণু মণ্ডলকে ঘিরে দালালরা মাছির মতো ভনভন করছে বেগোপাড়া চত্বরে। স্টেশন থেকে তাঁর বাড়ির পথে ধরতে গেলেই হাত দেখান অগুনতি। হিমশীতল কণ্ঠে তাঁদের সপাট প্রশ্ন, “কোথায় যাচ্ছেন?” রাণু মণ্ডলের নাম বললেই চোখ কুঁচকে তাকান আগন্তুক। জানিয়ে দেন, “অনুমতি ছাড়া ও বাড়িতে ঢোকা যাবে না।” অনুমতি মানে কড়কড়ে কতগুলো টাকার নোট। একদা পাড়ার ভিখিরি এখন ইউটিউবে ভাইরাল। তাঁকে ঘিরে জমিয়ে ব্যবসা ফেঁদেছেন জনাকয়েক বেকার।
বেচারা রাণু জানেন না, তাঁর নসিব না বদলালেও নামযশের সুবিধা নিয়ে ঘোলাজলে মাছ ধরছেন কেউ কেউ।এদিকে লতাকণ্ঠীর ঘরে উনুন জ্বলে না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই যে নেই তাঁর। চান না ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে।